অণুজীব জগৎ (Microbial World) বলতে অতি ক্ষুদ্র জীবের সেই জগৎকে বোঝায়, যা খালি চোখে দেখা যায় না এবং দেখতে মাইক্রোস্কোপের প্রয়োজন হয়। এই জীবগুলো এককোষী, বহুকোষী, অথবা কোষবিহীন হতে পারে এবং এদের আকার সাধারণত কয়েক মাইক্রোমিটার (µm) পর্যন্ত হয়।
অণুজীবের সংজ্ঞা:
অণুজীব হলো এমন জীব, যেগুলো অতি ক্ষুদ্র হওয়ার কারণে খালি চোখে দেখা যায় না এবং জীববিজ্ঞানের একটি বিশেষ শাখা, অণুজীব বিজ্ঞান (Microbiology), এই জীবগুলো নিয়ে গবেষণা করে।
অণুজীবের উদাহরণ:
- ব্যাকটেরিয়া (Bacteria): এককোষী জীব, যা বিভিন্ন রূপে (গোলাকার, দন্ডাকার ইত্যাদি) দেখা যায়।
- ভাইরাস (Virus): কোষবিহীন জীব, যা শুধুমাত্র একটি জীবিত কোষের ভেতর বংশবৃদ্ধি করতে পারে।
- ফাঙ্গি (Fungi): যেমন খামির বা ছত্রাক।
- প্রোটোজোয়া (Protozoa): এককোষী প্রাণী যেমন অ্যামিবা।
- শৈবাল (Algae): এককোষী বা বহুকোষী জীব যা আলো থেকে খাদ্য তৈরি করে।
অণুজীবের বৈশিষ্ট্য:
- ক্ষুদ্র আকার: এরা এত ছোট যে দেখতে মাইক্রোস্কোপের প্রয়োজন হয়।
- বিভিন্ন পরিবেশে বেঁচে থাকার ক্ষমতা: পানি, মাটি, বাতাস এমনকি উষ্ণ প্রস্রবণ বা বরফাচ্ছাদিত এলাকায়ও এরা টিকে থাকতে পারে।
- দ্রুত বংশবৃদ্ধি: অনেক অণুজীব অল্প সময়ে দ্রুত বংশবৃদ্ধি করতে সক্ষম।
- পরজীবী ও মুক্তজীবী: কিছু অণুজীব পরজীবী হয়ে অন্য জীবের শরীরে বেঁচে থাকে, আবার কিছু স্বাধীনভাবে বাঁচে।
- উপযোগিতা ও ক্ষতিকর দিক: অণুজীব কিছু ক্ষেত্রে উপকারী এবং কিছু ক্ষেত্রে ক্ষতিকর।
অণুজীবের প্রকারভেদ:
- উপকারী অণুজীব:
- খাদ্য তৈরি: দই, পনির, পাউরুটি।
- জৈব সার উৎপাদন।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি।
- ক্ষতিকর অণুজীব:
- রোগ সৃষ্টি: যেমন টাইফয়েড, কলেরা।
- খাদ্যদ্রব্য পচন।
অণুজীব জগতের গুরুত্ব:
- পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা:
- পচন প্রক্রিয়ায় মৃতদেহ ও জৈব পদার্থ ক্ষয় করে।
- নাইট্রোজেন ও অক্সিজেন চক্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- চিকিৎসা বিজ্ঞানে:
- অ্যান্টিবায়োটিক ও ভ্যাকসিন তৈরি।
- শিল্প ও কৃষিতে:
- জৈব সার উৎপাদন।
- খাদ্য সংরক্ষণ।
উপসংহার:
অণুজীব জগত আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলছে। একদিকে এগুলো পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে, অন্যদিকে বিভিন্ন রোগের জন্য দায়ী। তাই, অণুজীবের সঠিক ব্যবহার এবং নিয়ন্ত্রণ আমাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে পারে।