প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে মানুষের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। পরিবেশ রক্ষায় গাছপালা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি কেবল সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে না, বরং পৃথিবীর প্রাণিকুলের টিকে থাকার জন্য অপরিহার্য উপাদান হিসেবে কাজ করে। পৃথিবীর বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষা ও জলবায়ু নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে গাছপালার ভূমিকা অপরিসীম।
১. অক্সিজেন উৎপাদন
গাছপালা পরিবেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো অক্সিজেন উৎপাদন। তারা সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বায়ু থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে এবং অক্সিজেন নিঃসরণ করে। এই অক্সিজেন মানবজাতির পাশাপাশি অন্যান্য প্রাণীদের বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য। পরিবেশে যত বেশি গাছপালা থাকবে, ততই অক্সিজেনের প্রাপ্যতা বৃদ্ধি পাবে এবং মানুষ ও প্রাণীরা স্বাস্থ্যকর পরিবেশে জীবনযাপন করতে পারবে।
২. জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ
গাছপালা তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। গাছের পাতা সূর্যালোক শোষণ করে এবং বাষ্পীভবনের মাধ্যমে পরিবেশের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। গাছপালা পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকলে গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা সহনীয় পর্যায়ে থাকে এবং শীতকালে গাছপালার সাহায্যে পরিবেশ উষ্ণ থাকে। এইভাবে, গাছ পরিবেশের তাপমাত্রার ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
৩. মাটির ক্ষয় রোধ
গাছের শিকড় মাটিকে শক্ত করে ধরে রাখে, যা মাটির ক্ষয় রোধে সহায়ক। গাছপালাহীন এলাকায় বৃষ্টির পানি বা বায়ুর মাধ্যমে মাটি দ্রুত ক্ষয়ে যায়, যা কৃষিজমির উর্বরতা নষ্ট করে এবং বন্যা বা ভূমিধসের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। গাছপালা মাটির ওপরের স্তর ধরে রাখতে সহায়তা করে এবং বন্যা, ভূমিধস ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করে।
৪. কার্বন শোষণ
বায়ুমণ্ডলের কার্বন ডাই অক্সাইড মাত্রা নিয়ন্ত্রণে গাছের ভূমিকা অসীম। গাছপালা বায়ু থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে, যা গ্লোবাল ওয়ার্মিং রোধে সহায়ক। কার্বন ডাই অক্সাইডের অতিরিক্ত পরিমাণ বায়ুমণ্ডলে গ্রীনহাউস প্রভাব বাড়ায়, যা জলবায়ুর পরিবর্তনের অন্যতম কারণ। তাই গাছপালা রোপণ এবং সংরক্ষণ পরিবেশের কার্বন ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আরও পড়ুন:
৫. প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা
গাছপালা খাদ্য শৃঙ্খলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রাণীদের খাদ্যের উৎস হিসেবে গাছের ফল, পাতা ও অন্যান্য অংশ গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও, গাছের উপস্থিতি পরিবেশে নানা প্রজাতির পাখি, কীটপতঙ্গ ও বন্যপ্রাণীর বাসস্থান হিসেবে কাজ করে। গাছপালা সংরক্ষণ করে প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বজায় রাখা সম্ভব।
৬. বায়ু ও পানি পরিশোধন
গাছপালা বায়ু থেকে ক্ষতিকারক গ্যাস এবং ধূলিকণা শোষণ করে বায়ুর মান উন্নত করে। পাশাপাশি গাছের শিকড় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর বাড়াতে সাহায্য করে এবং বৃষ্টির পানি ধরে রেখে তা পরিশোধন করে। ফলে ভূগর্ভস্থ পানির মান উন্নত হয় এবং পানির স্তর সঠিক মাত্রায় বজায় থাকে।
৭. আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন
গাছপালা কেবল পরিবেশ রক্ষায় নয়, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অনেক উন্নয়নশীল দেশ গাছের কাঠ, ফল, ছাল এবং অন্যান্য উপাদানের ওপর নির্ভরশীল। এর মাধ্যমে কর্মসংস্থান, খাদ্য উৎপাদন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব হয়।
উপসংহার
পরিবেশ রক্ষায় গাছের ভূমিকা অপরিসীম। গাছ আমাদের অক্সিজেন প্রদান করে, কার্বন শোষণ করে এবং জলবায়ুর ভারসাম্য রক্ষা করে। গাছের অনুপস্থিতিতে পৃথিবীর জীবন ধারণ করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। তাই আমাদের সবাইকে গাছ লাগানো এবং তাদের সংরক্ষণের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে।