মেরুদণ্ডী প্রাণী হলো এমন প্রাণী যাদের দেহে একটি কশেরুকাযুক্ত মেরুদণ্ড (Vertebral Column বা Backbone) বিদ্যমান থাকে। এই প্রাণীগুলো প্রাণীজগতে কর্ডাটা পর্বের (Phylum Chordata) অন্তর্গত এবং এদের দেহের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো মেরুদণ্ডের উপস্থিতি, যা স্নায়ুতন্ত্রকে রক্ষা করে এবং শরীরের কাঠামো বজায় রাখে।
মেরুদণ্ডী প্রাণীর সংজ্ঞা:
যেসব প্রাণীর দেহে মেরুদণ্ড বা কশেরুকাযুক্ত একটি অভ্যন্তরীণ কঙ্কাল (Endoskeleton) থাকে, তাদের মেরুদণ্ডী প্রাণী বলা হয়। এই প্রাণীগুলোর মধ্যে স্নায়ুতন্ত্রের মূল অংশ (মস্তিষ্ক ও সুষুম্নাকাণ্ড) একটি সুরক্ষিত গহ্বরের মধ্যে থাকে।
মেরুদণ্ডী প্রাণীর বৈশিষ্ট্য:
- মেরুদণ্ডের উপস্থিতি: মেরুদণ্ড একটি কঙ্কাল কাঠামো যা কশেরুকা (Vertebrae) দিয়ে গঠিত।
- স্নায়ুতন্ত্র: এদের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র (Central Nervous System) মস্তিষ্ক এবং সুষুম্নাকাণ্ড নিয়ে গঠিত।
- অভ্যন্তরীণ কঙ্কাল (Endoskeleton): হাড় বা কার্টিলেজ দ্বারা তৈরি।
- বদ্ধ রক্তসংবহন তন্ত্র: মেরুদণ্ডী প্রাণীর রক্ত সঞ্চালন একটি বদ্ধ সঞ্চালন পদ্ধতির মাধ্যমে ঘটে।
- শ্বাস-প্রশ্বাসের অঙ্গ: শ্বাস নেওয়ার জন্য গিলস (Gills) বা ফুসফুস (Lungs) থাকে।
- উন্নত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ: চলাফেরার জন্য উন্নত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ (হাত, পা, পাখনা বা ডানা) থাকে।
মেরুদণ্ডী প্রাণীর শ্রেণিবিন্যাস:
মেরুদণ্ডী প্রাণী প্রধানত পাঁচটি শ্রেণিতে বিভক্ত:
- মাছ (Pisces):
- বৈশিষ্ট্য: গিলস দ্বারা শ্বাস-প্রশ্বাস।
- উদাহরণ: ইলিশ, রুই, হাঙর।
- উভচর (Amphibia):
- বৈশিষ্ট্য: জল এবং স্থলে উভয় পরিবেশে বাস করতে পারে।
- উদাহরণ: ব্যাঙ, স্যালামান্ডার।
- সরীসৃপ (Reptilia):
- বৈশিষ্ট্য: খোলসযুক্ত ডিম পাড়া, ত্বক শুষ্ক এবং আঁশযুক্ত।
- উদাহরণ: সাপ, কচ্ছপ, কুমির।
- পাখি (Aves):
- বৈশিষ্ট্য: পালকযুক্ত দেহ, ডানা এবং ফুসফুস দিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস।
- উদাহরণ: কাক, ঈগল, মুরগি।
- স্তন্যপায়ী (Mammalia):
- বৈশিষ্ট্য: দুধ উৎপাদনের গ্রন্থি, লোমযুক্ত দেহ।
- উদাহরণ: মানুষ, বাঘ, গরু, বানর।
মেরুদণ্ডী প্রাণীর উদাহরণ:
- মানুষ (Human)
- বাঘ (Tiger)
- ইলিশ মাছ (Hilsa)
- কচ্ছপ (Turtle)
- কাক (Crow)
মেরুদণ্ডী প্রাণীর গুরুত্ব:
- খাদ্য শৃঙ্খলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সহায়তা করে।
- বৈজ্ঞানিক গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করে।
মেরুদণ্ডী প্রাণী প্রাণীজগতের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি গোষ্ঠী, কারণ এদের শারীরিক কাঠামো এবং জীববৈচিত্র্য পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়ক।