গাছ কাটার ক্ষতিকর দিক রচনা

By Sohoj Uttar

Published on:

গাছ কাটার ক্ষতিকর দিক রচনা

ভূমিকা
গাছ প্রকৃতির অমূল্য সম্পদ। আমাদের পরিবেশকে সুস্থ ও সুন্দর রাখার জন্য গাছ অপরিহার্য। তবে নগরায়ন, কৃষি জমি সম্প্রসারণ, এবং শিল্পায়নের জন্য মানুষ নির্বিচারে গাছ কেটে চলেছে। গাছ কাটার ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে এবং এর ক্ষতিকর প্রভাব প্রাকৃতিক জীবনযাত্রাকে হুমকির মুখে ফেলছে। গাছ কাটা বন্ধ না করলে আগামীতে আমরা আরও বড় বিপদে পড়তে পারি।

গাছ কাটার ক্ষতিকর দিকসমূহ

১. পরিবেশের ভারসাম্যহীনতা
গাছ পরিবেশে অক্সিজেন সরবরাহ করে এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে, যা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সাহায্য করে। গাছ কাটার ফলে বায়ুতে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয়। এর ফলে গ্লোবাল ওয়ার্মিং বৃদ্ধি পায়, যা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে।

২. জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি
গাছপালা বিভিন্ন প্রাণী, পাখি এবং কীটপতঙ্গের জন্য আবাসস্থল হিসেবে কাজ করে। গাছ কেটে ফেলার কারণে এসব প্রাণীর আবাসস্থল ধ্বংস হয়, যা জীববৈচিত্র্য হ্রাসের একটি প্রধান কারণ। ফলে অনেক প্রাণী বিলুপ্তির পথে চলে যাচ্ছে এবং বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।

৩. মাটি ক্ষয় ও ভূমিধস
গাছের শিকড় মাটি আঁকড়ে ধরে রাখে এবং ভূমিধস প্রতিরোধ করে। গাছ কাটার ফলে মাটি আলগা হয়ে যায় এবং বৃষ্টি হলে মাটি ক্ষয় হতে শুরু করে। এটি ভূমিধসের কারণ হতে পারে এবং কৃষি জমির উর্বরতা কমিয়ে দেয়, যা কৃষকদের জন্য ক্ষতিকর।

৪. বায়ু দূষণ বৃদ্ধি
গাছ বায়ু থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে এবং আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ করে। গাছ কেটে ফেলার ফলে বায়ুতে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বাড়ে এবং বায়ুদূষণ বৃদ্ধি পায়। এর ফলে শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা এবং ফুসফুসের অন্যান্য রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়।

৫. জলবায়ু পরিবর্তন
গাছ কাটার ফলে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বাড়ছে, যা জলবায়ু পরিবর্তনের একটি বড় কারণ। গাছপালা সূর্যের তাপ শোষণ করে এবং পরিবেশকে শীতল রাখতে সাহায্য করে। গাছ কমে যাওয়ার ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে এবং অস্বাভাবিক আবহাওয়া পরিবর্তন ঘটছে, যা মানুষ ও প্রাণীর জন্য ক্ষতিকর।

আরো পড়ুন: পরিবেশ রক্ষায় গাছের ভূমিকা প্রবন্ধ রচনা

৬. প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি
গাছপালা প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যেমন বন্যা ও খরার বিরুদ্ধে প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। গাছ কাটার ফলে মাটির উপরিভাগ আলগা হয়ে যায় এবং বৃষ্টির পানি সহজেই প্রবাহিত হয়ে বন্যার সৃষ্টি করে। এছাড়া, খরা পরিস্থিতি আরও তীব্রতর হয়, কারণ গাছপালা মাটির আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।

গাছ কাটার প্রতিরোধে করণীয়
গাছ কাটা রোধে আমাদের সচেতন হওয়া এবং বৃক্ষরোপণে অংশগ্রহণ করা জরুরি। বনভূমি সংরক্ষণ, বৃক্ষরোপণ, এবং পরিবেশবান্ধব বিকল্প পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। আইনগত নিয়ন্ত্রণ এবং পরিবেশ সংরক্ষণে সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন।

উপসংহার
গাছ কাটার কারণে পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র্য বিপর্যস্ত হচ্ছে, যা মানব সভ্যতার জন্য অশনি সংকেত। সুতরাং, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এবং আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলতে আমাদের গাছ রোপণ এবং গাছ সংরক্ষণে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা উচিত।

Sohoj Uttar

Leave a Comment

সহজ উত্তর